কৃষিতে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যাবহার ও কৃষির উন্নতি – Use of modern technology in agriculture

যে কোনো অঞ্চলে শস্যের ফলন ও জমির কৃষিযোগ্যতা বিভিন্ন বিষয়ের ওপর নির্ভর করে । যেমন , সেই অঞ্চলের প্রাকৃতিক পরিবেশ (জলবায়ু, ভূপ্রকৃতি, মৃত্তিকা, জৈব পদার্থ) আর্থ-সামাজিক পরিবেশ, কৃষি প্রযুক্তির ব্যবহার ও নির্বাচিত শস্য । 

তাই উন্নত কৃষি প্রযুক্তির প্রয়োগ ঘটিয়ে কৃষিকাজের ধারার আমূল পরিবর্তন আনা সম্ভব । কৃষিতে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যাবহার গুলি সম্পর্কে আজকে আমরা আলোচনা করবো।

  1. জোতের আয়তন বৃদ্ধি: ছোট ছোট বিভিন্ন আকৃতির জমিতে চাষাবাদ কৃষকদের লাভজনক তেমন হয় না, এই ধরণের কৃষি দ্বারা শুধু জীবন ধারণ করে সম্ভব হয় । তাই ছোট ছোট জমিকে একত্রিত করে ব্যাপকভাবে চাষ করা হলে লাভ বেশ হয়ে থাকে এবং বিভিন্ন কৃষিপ্রযুক্তির ব্যবহার করা সম্ভব ।
  2. যন্ত্রপাতির ব্যবহার : জোতের আয়তন বড়ো হলে কৃষি যন্ত্রপাতি (ট্রাক্টর,হার্ভেস্টর, পাম্প,যন্ত্রের সাহার্যে ফসল রোপন /বপন ইত্যাদি ) ব্যবহার করা সুবিধাজনক এবং লাভজন। কারণ এতে কম শ্রমিক কম মজুরি দ্বারা বেশি উৎপাদন করা সম্ভব।
  3.  শ্রমিকদের কর্মদক্ষতা : নিবিড় জীবিকা সত্তাভিত্তিক কৃষি ব্যবস্থায় কৃষক তার আপন অভিজ্ঞতার উপর ভিত্তি করে পুরনো প্রযুক্তির সাহায্যে চাষাবাদ করে। কিন্তু উন্নত দেশগুলোতে কৃষকরা নানা ধরনের যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে তাদের দক্ষতাকে বহু গুণ বাড়িয়ে তোলে। তাই বর্তমান কৃষি সংক্রান্ত শিক্ষায় কৃষকদের পারদর্শী করে তোলা শব্দ দেশেরই আবশ্যক, যাতে ফলনের মান ও হেক্টর পিছু ফলন বৃদ্ধি পায়।
  4.  বীজ সার জলসেচ কীটনাশক প্রয়োগ: জমিতে ফসলের প্রকৃতি অনুসারে উন্নত মানের উচ্চ ফলনশীল বীজ প্রযুক্তির পরিমাণ জৈব অজৈব সারের প্রয়োগ প্রয়োজন তাদের জমির ফলন বৃদ্ধি পায়। এছাড়া সারা বছর জমিতে চাষাবাদ করতে হলে শুধু বর্ষার জলের উপর নির্ভর না করে খুব খেয়াল চলাশয় উন্নতি থেকে জলসেচ করা প্রয়োজন। ফসলকে পোকামাকড়ের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য প্রয়োজনমতো কীটনাশক প্রয়োগ করাও জরুরি।
  5.  জমির উপযুক্ত ব্যবহার: প্রয়োজন অনুসারে জমি শস্যাবর্তন শস্য সমন্বয় ব্যবস্থা চালু করা দরকার এ ছাড়া এক ফসলী জমিকে দিয়ে ফসলি বা বহুবচনে জমিয়ে পরিণত করে জমির উৎকর্ষ সাধন করা প্রয়োজন।
  6.  পরিবহন: কৃষি জাতীয় পণ্য দ্রুত বাজারে বা শিল্পকেন্দ্রে প্রেরণ করার জন্য পরিবহন ব্যবস্থার প্রসার অন্তত জরুরি। এর ফলে কৃষি পণ্যের যোগান বৃদ্ধি করা যায় দ্রুত হিমঘরে চারণ করে কৃষি যত ফসলের রক্ষণাবেক্ষণ করা যায়। অনেক ক্ষেত্রে উপযুক্ত পরিবহনের অভাবে আসল পরে থেকে পথে নষ্ট হয়ে যায় এছাড়া হিমঘর গুলোর রক্ষণাবেক্ষণ অন্তত জরুরী।

 চলুন এবারে জানাজার কৃষিতে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের ফলে কৃষির কতটা উন্নত সাধন করা সম্ভব।

কৃষিতে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার

 প্রযুক্তির ব্যবহারের ফলে আধুনিক কৃষির ব্যাপক প্রসার ঘটেছে। কিসে শুধু শস্য উৎপাদনে আটকে নেই। বাচ্চা শ্বাসমুর কি গবাদি পশুপালন কীট পতঙ্গ প্রতিপালন এবং আরও অন্যান্য দেখে কৃষিকাজ বিস্তার লাভ করেছে। তাই বৈজ্ঞানিক প্রযুক্তি নির্ভর আধুনিক কৃষি অর্থ উপার্জনের একটি অন্যতম প্রধান মাধ্যমিক পরিণত হয়েছে। উৎপাদিত ফসলের কিছুটা বা কখনো কখনো পুরোটাই বাণিজ্য হয়ে যায়। তাই সামগ্রিকভাবে আধুনিক কৃষি বাণিজ্যিক কৃষিতে পরিবর্তিত হচ্ছে।

কৃষি পদ্ধতির বিভিন্নভাবে প্রযুক্তি ব্যবহার (Use of technology in different steps on agriculture)

 জমি কর্ষণ বীজ বপন রোপণ গাছ পরিচর্যা ফসল তোলা ও ঝাড়াই করা, গুদাম যত করা ও বাজারে পাঠানো পর্যন্ত সমস্ত কার্যপ্রণালী যেসব যন্ত্রের সাহায্যে করা হয় তাদের সংক্ষিপ্ত পরিচয় নিচে আমরা দেওয়ার চেষ্টা করছি।

  •  জমির প্রযুক্তিকরণ : জমির মাটি তৈরি করে তাকে চাষের উপযোগী করে তোলা হয় ট্রাক্টারের সাহায্যে। আধুনিক কৃষিকাজ এ কম পরিশ্রমে জমি তৈরির জন্য ট্রাক্টারের পিছনে অনেক ধরনের যন্ত্রাংশ লাগানো ব্যবস্থা থাকে যার সাহায্যে মাটিকে টুকরো টুকরো করা হয়, আগাছা পরিষ্কার করা হয়। তারপর বীজ লাগানোর সুবিধা অনুযায়ী গর্ত বা সারি তৈরি করা হয়।
  •  বীজ বোনা ও চারাগাছ রোপন : এই কাজে অনেকগুলি যন্ত্রের দরকার হয়। যেমন, জমিতে বীজ ছড়ানোর জন্য আছে ব্রডকাস্ট সিডার (Broadcast Seeder) ও এয়ার সিদার (Air Seeder)। গর্ত তৈরি করে বিষ কে নির্দিষ্ট করতে ফেলার জন্য আছে সিড ড্রিল (Seed drill), প্রিসিশান ড্রিল (Precision drill) প্রভৃতি। এছাড়া ধানের চারাকে রোপন করা হয় ট্রান্সপ্লানটার (transplanter) দিয়ে।
  •  সার ও কীটনাশক প্রয়োগ : আধুনিক প্রযুক্তির সাহায্যে জমিতে সার দেওয়া হয় যন্ত্র বা ব্রডকাস্ট সিডার দিয়ে। তরল বস্তু দেওয়া হয় স্প্রে মেশিন দিয়ে। এছাড়া ব্যবহার করা হয় বিভিন্ন যন্ত্রাংশ যা দ্বারা জমিতে সার কীটনাশক প্রয়োগ করতে সুবিধা হয়।
  •  সেচ কাজ : ভূগর্ভস্থ জল তোলার জন্য গভীর ও আগামীর নলকূপ নদীর জল উত্তোলনের জন্য পাম্পিং সেট, এবং ক্ষুদ্র শেষ ব্যবস্থায় কেন্দ্রীয় কীলক পদ্ধতি যন্ত্র, ছিদ্রযুক্ত পাইপ ইত্যাদি ব্যবহার করার মাধ্যমে ফসলে জল সেচের ক্ষেত্রে সুবিধা হয়ে থাকে।
  •  শস্য ঝাড়াই বা বাছাই করণ : উৎপাদিত শস্যের ওজন রং ব্যাস আকৃতি ঘনত্ব স্বাদ অনুযায়ী ছাড়াই বাছাই করার জন্য অনেক ধরনের যন্ত্র আছে। এছাড়া পরিপক্ক ও অপরিপক্ক বা খারাপ শস্যকে পৃথক করার যন্ত্র আছে। এই সমস্ত আধুনিক যন্ত্রের ব্যবহারের ফলে কৃষিকাজে এসেছে প্রযুক্তির ব্যবহার।
  •  শস্য উত্তোলন বা আহরণ : পাকা শস্যকে জমি থেকে তোলার জন্য ৪৩ রকমের যন্ত্র আছে। ৫০০ অনুযায়ী প্রতি যন্ত্রের ডিজাইন ও কর্ম সম্পাদনা বিভিন্ন প্রকৃতির। ফসলের ক্ষেত্রে এইসব যন্ত্রচালনা করে ফসল তোলা হয়। দাদা শষ্যকে গাছ থেকে পৃথক করা হয় সবসময় মারাই যন্ত্র দ্বারা বা থেসার মেশিন দ্বারা। এছাড়া ফসল আহারানও মারাই অনেক সময় একই যন্ত্র দ্বারা করা হয় একে কম্বাইন্ড হারভেস্টার বলে।
  •  খড়ের আটি বাধা : ধান গম তোলা ষষ্ঠী তিল ইত্যাদি এ জাতীয় শস্যকে আহরণের পর এসব গাছকে ঘরগুলিকে এক একটি আর্টি বা বান্ডিল করা এবং বান্ডেল গুলোকে অন্যত্র সরানোর সব কাজ যন্ত্রের সাহায্য করা হয়। এসব কাজে দর্শকের যন্ত্র ব্যবহার করা হয় যেমন – বেইল মুভার, বেইল রেপার ইত্যাদি।

 কৃষিতে প্রযুক্তির ব্যবহার প্রাচীন সভ্যতা সময় থেকেই ছিল। জমিতে চাষে নাঙ্গলের ব্যবহার প্রথম শুরু হয় মেসোপটেমিয়া সভ্যতায়। মিশর সভ্যতার সেচ কাজ হতো কপিকল, পার্শিয়ান চাকার সাহায্যে। এছাড়া আরো অনেক ছোটখাটো কৃষি সরঞ্জাম বা হাতিয়ার যেমন কোদাল, খুর্পি, কাস্তে, প্রভৃতির প্রচলন ছিল। জীবনধারণ এই চিঠি ব্যবস্থা ও দীর্ঘকাল ধরে চলে আসছে। তখন ভারী যন্ত্র টানাহত করা বলদ মহিষ প্রকৃতি ভারবাহী পশু দিয়ে।

 জমি কর্ষণ থেকে পাকা ফসল তোলা যারাই মারাই ও ষষ্ঠ ঘরে তোলা পর্যন্ত কৃষিকাজের সব ধরনের প্রযুক্তি প্রচলন ছিল না। কিন্তু আধুনিক যন্ত্র সম্প্রদায় কিসের প্রযুক্তির আমল পরিবর্তন ও কৃষির ধাপে যান্ত্রিকরণ এর সাথে সাথে কৃষি প্রণালীর পরিবর্তন ঘটেছে। পশু চালিত যন্ত্রের কাজ এখন অজৈব শক্তিশালীত যন্ত্র দ্বারা করা হয়। কৃষিবিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উত্তরণ বর্তমান আধুনিক কৃষি ব্যবস্থাকে আমূল পরিবর্তন এনেছে এবং ফসলের পরিমাণও দ্বিগুণ করতে কৃষিবিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সাহায্য করে চলছে।

Leave a Comment