আদ্র কৃষি ও শুষ্ক কৃষি ও সেচ কৃষি বিষয়ে সম্পূর্ণ ধারণা জানুন এই প্রতিবেদনটিতে । Wet Farming,Dry farming & Irrigation Farming
Table of Contents
আদ্র কৃষি ও শুষ্ক কৃষি ও সেচ কৃষি বিষয়ে সম্পূর্ণ ধারণা জানুন এই প্রতিবেদনটিতে । Wet Farming,Dry farming & Irrigation Farming
আর্দ্র কৃষি ( Wet Farming )
আদ্র কৃষি কাকে বলে ?
কোনো কোনো অঞ্চলে জলসেচের সুযোগ নেই বা থাকলেও তা সীমিত । সেখানে জলসেচের সাহায্য ছাড়াই কেবল বৃষ্টির জলের ওপর নির্ভর করে যে কৃষিকাজ করা হয় , তাকে বলে আর্দ্র কৃষি।
আদ্র কৃষির বৈশিষ্ট্য :
- ১যে সকল অঞ্চলে নিয়মিত ও পর্যাপ্ত পরিমাণে বৃষ্টিপাত হয় , সেখানে মাটি আর্দ্র থাকে । তাই কৃষিকাজের জন্য আর জলসেচের দরকার হয় না । অনেক ক্ষেত্রে ভৌমজলপ্তরও ভূপৃষ্ঠের নিকটে অবস্থান করে । ফলে মাটির আর্দ্রতা বজায় থাকে ।
- এক্ষেত্রে কৃষক বৃষ্টির আগেই জমি তৈরি করে রাখে এবং বৃষ্টি শুরু হলেই বীজ বুনতে শুরু করে ।
- এসকল অঞ্চলে শুষ্ক ঋতুতে কৃষিকাজ হয় না ।
- এই কৃষিতে কৃষকের কর্মদক্ষতা পরিবেশ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত । সে প্রধানত নিজের চাহিদা মেটাতেই এই কাজে অংশ নেয় ।
- জলসেচের সুযোগ না থাকায় এখানে মূলধনের বিনিয়োগ সীমিত ।
- ফলনের হার ও মোট উৎপাদন কম ।
- উৎপাদনে উদ্বৃত্ত হয় না বললেই চলে । ফলে কৃষিপণ্য রপ্তানি করার কোনো সুযোগ নেই ।
- উন্নয়নশীল দেশগুলিতে আর্দ্র কৃষির অন্তর্গত জমিগুলির আয়তন ছোটো । সমতল ভূমিতে নদী – খাল – জলাশয় থেকে দূরে বা যেখানে জলসেচের সুযোগ নেই সেখানে , মালভূমির সমতল শীর্ষদেশে ( যেখানে বেশি বৃষ্টি হয় ) , পর্বত বা মালভূমির প্রতিবাত ঢালে এ ধরনের কৃষি দেখা যায় । ধান , পাট ইত্যাদি এই কৃষির প্রধান ফসল ।
আদ্র কৃষির অবস্থান : দক্ষিণ ও পূর্ব এশিয়ার ভারত , বাংলাদেশ , শ্রীলঙ্কা , মায়ানমার , ইন্দোনেশিয়া , মালয়েশিয়া প্রভৃতি দেশের মৌসুমি বৃষ্টিবহুল অঞ্চলে , ইথিওপিয়া , জাম্বিয়া , ব্রাজিলের দক্ষিণাংশ ইত্যাদি অঞ্চলে আর্দ্র কৃষির প্রচলন আছে । জ . জমির মালিকানা
শুষ্ক কৃষি ( Dry farming )
শুষ্ক কৃষি কাকে বলে ?
যেসব অঞ্চলে বার্ষিক বৃষ্টিপাতের পরিমাণ খুবই কম ( সাধারণত 50 সেমি . – র কম ) , জলসেচেরও সুবন্দোবস্ত নেই , সেসব অঞ্চলে যে কৃষিব্যবস্থা প্রচলিত আছে , তাকে বলে শুষ্ক কৃষি।
শুষ্ক কৃষির বৈশিষ্ট্য :
- এ ধরনের কৃষি খরাপ্রবণ অঞ্চলে প্রচলিত । এই কৃষির অন্তর্গত অঞ্চলে বৃষ্টিপাত অনিশ্চিত , বৃষ্টিপাতের পরিমাণও অল্প ।
- বেলে , দোআঁশ মাটি এই কৃষির উপযুক্ত । কারণ , এধরনের মাটির জলধারণ ক্ষমতা কম ।
- জলের অপচয় নিবারণের জন্য বড়ো জমিকে ছোটো ছোটো অংশে ভাগ করা হয় ।
- মাটিকে প্রথমে গভীরভাবে কর্ষণ করা হয় , যাতে বৃষ্টির জল মাটির গভীরে প্রবেশ করতে পারে ।
- জলের অপচয় বন্ধের জন্য জমিকে আগাছা মুক্ত রাখার চেষ্টা করা হয় ।
- তবে শুষ্ক কৃষি ব্যবস্থায় উৎপাদন ব্যয় অধিক হলেও ফলন সে তুলনায় কম ।
- যে সকল শস্য লাভজনক , যাদের চাহিদা রয়েছে , সে সকল ফসলের চাষই করা হয় । যেমন মিলেট , জোয়ার , বাজরা , রাগি ইত্যাদি এই কৃষি ব্যবস্থার প্রধান ফসল ।
- এই পদ্ধতিতে জলসেচের ব্যবহার নেই ।
- বছরে একবার চাষের পর জমি ফেলে রাখা হয় ।
- জমিকে কর্ষণ করার পর খড় দিয়ে ঢেকে রাখা হয় যাতে মাটির আর্দ্রতা কমে না যায় ।
- খরা সহ্য করতে পারে বা কম জল লাগে এমন শস্যের চাষ হয় ।
- এটি এক ফসলি কৃষি ব্যবস্থা যেখানে জোতগুলি ছোটো হয় , কৃষি উৎপাদনের পরিমাণ কম হয় ।
শুষ্ক কৃষির অবস্থান : পশ্চিম অস্ট্রেলিয়া , মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পশ্চিমাংশ , কানাডা , দক্ষিণ – আফ্রিকা , মধ্য আমেরিকা , দক্ষিণ – পশ্চিম ব্রাজিল , পশ্চিম – এশিয়া , ভারতের পশ্চিমাংশ ( পাঞ্জাব , রাজস্থান , গুজরাট ) , দক্ষিণ ভারতের অভ্যন্তরভাগ ইত্যাদি অঞ্চলে শুষ্ক কৃষিব্যবস্থার প্রচলন দেখা যায় ।
সেচ কৃষি ( Irrigation Farming )
সেচ কৃষি ( Irrigation Farming )
সেচ কৃষি কাকে বলে ?
বৃষ্টিপাতের পরিমাণ শস্যের উৎপাদন ও চাহিদার তুলনায় কম ও অনিশ্চিত হলে জলসেচের দ্বারা ফসল ফলানো হয় , তখন তাকে সেচ কৃষি বলে ।
সেচ কৃষির বৈশিষ্ট :
- নদী , কূপ , নলকূপ , খাল , জলাশয় ইত্যাদি উৎসকে অবলম্বন করে জলসেচ করা হয় । ফলে ভূপৃষ্ঠস্থ জল ও ভৌমজল উভয়ই কৃষিতে ব্যবহৃত হয় । এক্ষেত্রে শ্রমশক্তি ও পাম্প উভয়েই ব্যবহার করা হয় ।
- চাহিদা অনুযায়ী বছরের বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ফসলের চাষ করা হয় জলসেচের সাহায্যে ।
- একই জমি থেকে একাধিকবার ফসল উৎপাদন করা যায় ।
- জমিতে সারা বছরই চাষ করা যায় । ফলে শুষ্ক ও আর্দ্র কৃষির তুলনায় এক্ষেত্রে অনেক বেশি মূলধনের প্রয়োজন হয় ।
- কৃষকদের অধিক ফসল তোলার সুযোগ থাকায় তাদের আর্থিক অবস্থাও তুলনামূলকভাবে ভালো ।
- এই কৃষিব্যবস্থায় অত্যধিক জলসেচের প্রভাবে বদ্বীপ অঞ্চলের মাটি অনেকসময় লবণাক্ত হয়ে পড়ে ।
- চাহিদা অনুযায়ী বিভিন্ন প্রকার খাদ্যশস্য ( ধান , গম ) , তন্তু ফসল ( তুলা ) , শাকসবজি , ডাল , তৈলবীজ ইত্যাদির চাষ করা হয় ।
সেচ কৃষির অবস্থান : সাধারণত নদী অববাহিকা অঞ্চলে সেচ কৃষির প্রাধান্য লক্ষ্য করা যায় । যথা- ভারতের সিন্ধু গাঙ্গেয় সমভূমি ( পাঞ্জাব , হরিয়ানা , উত্তর প্রদেশ , বিহার , পশ্চিমবঙ্গ , ওড়িশা ) , মিশরের নীলনদের অববাহিকা , চিনের হোয়াংহো -ইয়াংসিকিয়াং নদীর সমভূমি , মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মিসিসিপি – মিসৌরি নদীর অববাহিকা ইত্যাদি ।